বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিজ্ঞান জগতে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। আর এ নতুন যুগের সূচনা করেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব প্রবর্তনের মাধ্যমে। চিরায়ত বলবিজ্ঞানের মতে স্থান, কাল এবং ভর ধ্রুব। আইনস্টাইন এগুলো সম্পর্কে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, স্থান, কাল এবং ভর এগুলো পরম কিছু নয়; এগুলো আপেক্ষিক। সুতরাং আইনস্টাইনের এ তত্ত্বকে বলা হয় আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। আপেক্ষিকতা তত্ত্বটি দুটো ভাগে বিভক্ত। এগুলো হলো :
নিউক্লিয় ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বৃহত্তম তত্ত্ব আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে। গতিবিজ্ঞানের সূত্র, স্থান, কাল এবং ভরের আপেক্ষিকতার বৈজ্ঞানিক মতবাদ এবং এ মতবাদ থেকে আইনস্টাইনের সিদ্ধান্তসমূহ আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব নামে পরিচিত। আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্বের কথা আইনস্টাইন বলেন আরো এক দশক পরে ১৯১৫ সালে। সার্বিক তত্ত্বে তিনি গ্রহ, নক্ষত্র, ধূমকেতু ইত্যাদির গতি, অভিকর্ষ এবং এ মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কিত তাঁর বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক মতবাদ ব্যক্ত করেন।
আপেক্ষিকতা তত্ত্বের যে দুটো গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে আজকের নিউক্লিয় যুগের সূচনা হয়েছিল তা হলো ভরের আপেক্ষিকতা অর্থাৎ গতির সাথে ভরের পরিবর্তন এবং ভরকে শক্তিতে রূপান্তর। আইনস্টাইনের মতে, ভর এবং শক্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এরা একই সত্তার দ্বৈত প্রকাশ। আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বিস্ময়কর অবদান ভরশক্তি সম্পর্ক, E = mc2-এর অর্থ হলো কোনো পদার্থে যে শক্তি নিহিত থাকে তা তার ভর এবং আলোর বেগের বর্গের গুণফলের সমান। সুতরাং সামান্য পরিমাণ ভরের মধ্যে নিহিত রয়েছে প্রচুর শক্তি।
আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব দুটি মৌলিক স্বীকার্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলো-
ব্যাখ্যা: ধরা যাক, S' কাঠামো S- কাঠামোর সাপেক্ষে X - অক্ষ বরাবর v দ্রুতিতে গতিশীল (চিত্র ৮.৩)। S কাঠামোতে নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্রটি হলো = m। S' কাঠামোতে এই সূত্রটির রূপ হবে
প্রথম স্বীকার্যের মতে পদার্থবিজ্ঞানের
সূত্রগুলো পরম, সার্বজনীন এবং সকল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর পর্যবেক্ষকের নিকট একই। এক জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর পর্যবেক্ষকের নিকট এই সূত্রগুলো খাটলে অপর জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর পর্যবেক্ষকের জন্যও খাটবে।
দ্বিতীয় স্বীকার্য : দ্বিতীয় স্বীকার্যকে বলা হয় আলোর দ্রুতির ধ্রুবতার নীতি। স্বীকার্যটিকে নিম্নোক্তভাবে বিবৃত করা যায়
বিবৃতি : শূন্যস্থানে সকল জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলোর দ্রুতি c এর মান একই।
ব্যাখ্যা : দ্বিতীয় স্বীকার্যে বিবৃত বিষয়টি আমাদের সাধারণ জ্ঞান ও দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার পরিপন্থী এবং একে মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।
মনে করা যাক, তিনজন পর্যবেক্ষক O1, O2 ও O3 যথাক্রমে তিনটি জড়প্রসঙ্গ কাঠামো S1, S2 ও S3 তে রয়েছেন।
কাঠামো S2, S1 থেকে c/4 দ্রুতিতে দূরে সরে যাচ্ছে এবং S3, S1 এর দিক c/4 দ্রুতিতে এগিয়ে আসছে। S1 জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর পর্যবেক্ষক O1, একটি আলোক ঝলক নিঃসরণ করলেন এবং আলোর দ্রুতি পরিমাপ করলেন । যেহেতু O2, O1 থেকে c/4 দ্রুতিতে দূরে চলে যাচ্ছেন, সুতরাং আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা অনুসারে পর্যবেক্ষক O2 এর আলোর দ্রুতি পরিমাপ করার কথা এবং O3 এর আলোর দ্রুতি পরিমাপ করার কথা । কিন্তু দ্বিতীয় স্বীকার্য অনুসারে এটা সম্ভব নয় । সকলেই আলোর দ্রুতি c পরিমাপ করবেন।
ধরা যাক, শূন্যস্থানে S' কাঠামো S-কাঠামোর সাপেক্ষে X-অক্ষ বরাবর দ্রুতিতে গতিশীল। S কাঠামোতে একটি আলোক শিখা প্রজ্বলিত হলো (চিত্র ৮.৪)। S-কাঠামোর একজন পর্যবেক্ষক আলোর দ্রুতি পরিমাপ করলেন c এবং S'- কাঠামোর একজন পর্যবেক্ষক আলোর দ্রুতি পরিমাপ করলেন । এই স্বীকার্য অনুসারে, c = c' হবে। অর্থাৎ উভয়েই আলোর দ্রুতি একই পরিমাপ করবেন। এই স্বীকার্য অনুসারে আলোর দ্রুতি সার্বজনীন ধ্রুবক ।
আরও দেখুন...